প্রিন্ট হেড – ডিটিএফ এর সবথেকে অপরিহার্য একটি অংশ।
আপনি কি জানেন ইঙ্কজেট প্রিন্টার ঠিক কিভাবে, অসাধারণ সব কালারে আপনার ডিজাইন প্রিন্ট করে? আসল কারণটা হল, যে চারটি সিএমওয়াইকে ইঙ্ক ডিটিএফ-এ ব্যবহার করা হয়, সেগুলি মিলে-মিশে বিভিন্ন ধরণের রঙ তৈরি করতে পারে। প্রিন্টহেড, যে কোনও প্রিন্টিং অপারেশনের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্রাংশ। প্রিন্টিং মেশিনে, কোন ধরণের প্রিন্টহেড ব্যবহার করা হচ্ছে, তা কিন্তু ব্যাপকভাবেই প্রিন্টিং আউটপুটকে প্রভাবিত করে, তাই প্রিন্ট-হেড এর স্ট্যাটাস, প্রিন্টিং-এর কোয়ালিটির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রিন্টহেড মূলত অনেকগুলো ক্ষুদ্র ইলেক্ট্রিক্যাল কম্পোনেন্ট ও অসংখ্য নজেলের সমন্বয়ে তৈরি, যা ভিন্ন ভিন্ন কালার ইঙ্ক ধরে রাখে। আর এই নজেলগুলোই প্রিন্টারে ব্যবহৃত ফিল্ম বা পেপারে ইঙ্ক স্প্রে করে।
উদাহরণস্বরূপ, Epson L1800 প্রিন্ট হেডে 6 সারি নজেল রয়েছে, প্রতিটি সারিতে 90টি, মোট 540টি নজেল হোল। সাধারণভাবে, প্রিন্ট হেডে নজেল সংখ্যা যত বেশি হবে, প্রিন্টিংয়ের স্পিড ও তত বেশি হবে এবং প্রিন্টিংয়ের কোয়ালিটি আরো স্মুথ ও সূক্ষ্ম হবে।
কিন্তু এতগুলো নজেলের মধ্যে অল্পকিছুও যদি বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে প্রিন্টিং ইফেক্টে বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দিতে পারে। কারণ ইঙ্ক সাধারণত ক্ষয়কারক, এবং প্রিন্ট হেডের ভিতরের অংশ প্লাস্টিক এবং রাবার দিয়ে তৈরি, তাই বেশি সময় ধরে ব্যবহার করলে , নজেলগুলোও ইঙ্কে আটকে যেতে পারে এবং প্রিন্ট হেডের উপরের অংশ ইঙ্ক কিংবা ধূলা-বালি দ্বারা দূষিত হতে পারে। একটি প্রিন্ট হেডের আয়ুষ্কাল প্রায় ৬ থেকে ১২ মাসের কাছাকাছি হয়, তাই সময়মতো প্রিন্ট হেডটি রিপ্লেস করা উচিৎ, যদি টেস্ট স্ট্রিপটি কখনও অসম্পূর্ণ দেখা যায়।
প্রিন্ট হেডের স্ট্যাটাস পরীক্ষা করার জন্য, সফ্টওয়্যারে প্রিন্ট হেডের টেস্ট স্ট্রিপ প্রিন্ট করতে হবে। যদি লাইনগুলি অবিচ্ছিন্ন এবং সম্পূর্ণ হয় এবং কালারগুলি সঠিক হয়, তাহলে বুঝতে হবে নজেল ভাল অবস্থায় রয়েছে। যদি মাঝে মাঝে অনেকগুলো লাইন থাকে, তাহলে বুঝতে হবে প্রিন্ট হেড রিপ্লেসের সময় চলে এসেছে।
সফ্টওয়্যার সেটিংস এবং প্রিন্টিং কার্ভ (ICC প্রোফাইল)
প্রিন্ট হেডের প্রভাব ছাড়াও, সফ্টওয়্যারের সেটিংস এবং প্রিন্টিং কার্ভ নির্বাচনও প্রিন্টিং কোয়ালিটিকে প্রভাবিত করে। প্রিন্টিং শুরু করার আগে, আপনার প্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যারটিতে সঠিক স্কেল ইউনিট নির্বাচন করুন, যেমন সেঃমিঃ, মিঃমিঃ এবং ইঞ্চি, তারপরে ইঙ্ক ডটটি মিডিয়ামে সেট করুন। সবশেষে প্রিন্টিং কার্ভ নির্বাচন করুন। প্রিন্টার থেকে বেস্ট আউটপুট পেতে, সমস্ত প্যাড়ামিটার সঠিকভাবে সেট করা প্রয়োজন। যেহেতু আমরা জানি যে চারটি CMYK ইঙ্ক থেকেই বিভিন্ন কালার মিশ্রিত হয়, তাই ভিন্ন ভিন্ন কার্ভ বা ICC প্রোফাইল ভিন্ন ভিন্ন মিক্সিং অনুপাতের সাথে মিলে যায়। প্রিন্টিং ইফেক্টও প্রায়শই ICC প্রোফাইল বা প্রিন্টিং কার্ভের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। এছাড়াও প্রিন্টিং কার্ভটি অনেকসময় ইঙ্ক-এর সাথে সম্পর্কিত থাকে, নিম্নে তা ব্যাখ্যা করা হল।
প্রিন্টিং-এর সময়, সাবস্ট্রেটের উপরে ইঙ্কের পৃথক ফোঁটাগুলি, ডিজাইনের সামগ্রিক কোয়ালিটিকে প্রভাবিত করবে। ইঙ্কের ফোঁটা যত ছোট হবে, প্রিন্টিং রেজোলিউশনও তত ভালো হবে। এটি প্রাথমিকভাবে ভালো হয় যখন স্পষ্ট কোন লেখার ডিজাইন তৈরি করা হয়, বিশেষ করে সূক্ষ্ম লাইন থাকতে পারে এমন লেখা।
কোন কোন ক্ষেত্রে ইঙ্কের বড় ফোঁটা ব্যবহার করা সুবিধাজনক, যখন দ্রুত প্রিন্টিং করে বড় এরিয়া কভার করতে হয়। ইঙ্কের বড় ফোঁটা, যেকোন বড় ফ্ল্যাট সারফেস, যেমন বড় ফরম্যাট সাইনেজ, প্রিন্ট করার জন্য ভাল।
প্রিন্টিং কার্ভ মূলত আমাদের প্রিন্টার সফ্টওয়্যারের সাথে তৈরি, এবং কার্ভটি আমাদের ইঙ্ক অনুযায়ী, টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা ক্যালিব্রেট করা থাকে, ফলে কালারের নির্ভুলতা হয় নিখুঁত, তাই আমরা আপনার প্রিন্টিং-এর জন্য আমাদের ইঙ্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। অন্যান্য RIP সফ্টওয়্যারও আপনাকে প্রিন্ট করার জন্য ICC প্রোফাইল ইম্পোর্ট করতে বলবে। এই প্রক্রিয়াটি নতুনদের জন্য বেশ কষ্টকর এবং জটিল।
ইমেজ ফরম্যাট এবং পিক্সেল সাইজ:
প্রিন্ট করা প্যাটার্নটি আপনার অরিজিনাল ছবির সাথেও সম্পর্কিত। যদি আপনার অরিজিনাল ছবি কম্প্রেসড হয় বা পিক্সেল কম হয়, তবে তার আউটপুটও খারাপ হবে। কারণ প্রিন্টিং সফটওয়্যার, খুব স্পষ্ট ছবি না হলে অপ্টিমাইজ করতে পারে না। তাই ছবির রেজোলিউশন যত বেশি হবে, প্রিন্টেড আউটপুটও তত ভালো হবে। পিএনজি ফরম্যাটের ছবি প্রিন্ট করার জন্য বেশি উপযুক্ত কারণ এটির ব্যাকগ্রাউন্ড ট্র্যান্সপারেন্ট থাকে, যেখানে অন্যান্য ফরম্যাটগুলির থাকেনা, যেমন JPG।
DTF ইঙ্কঃ
আলাদা আলাদা ইঙ্কের আলাদা আলাদা প্রিন্টিং ইফেক্ট থাকে। উদাহরণস্বরূপ, UV ইঙ্ক দিয়ে সাধারণত অনেক ধরণের ম্যাটেরিয়ালে প্রিন্ট করা হয়, অন্যদিকে DTF ইঙ্ক শুধুমাত্র ট্রান্সফার ফিল্মে প্রিন্ট করতে ব্যবহৃত হয়। প্রিন্টিং কার্ভ এবং আইসিসি প্রোফাইলগুলি বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অ্যাডজাস্টমেন্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। কোন DTF ইউজার যদি সাধারণ কোন ইঙ্ক বেছে নেয়, তাহলে সফ্টওয়্যারের প্রিন্টিং কার্ভ, ওই ইঙ্কের জন্য সঠিক নাও হতে পারে, যা প্রিন্টিং কোয়ালিটিকে প্রভাবিত করবে। খেয়াল রাখা উচিৎ যেন বিভিন্ন গ্রেডের ইঙ্ক একসাথে না মিশানো হয়, কারণ এটি খুব সহজেই প্রিন্টহেড ব্লক করে ফেলতে পারে। এছাড়াও সব ইঙ্কেরই নির্দিষ্ট শেলফ লাইফ থাকে, একবার ইঙ্কের বোতল খোলা হলে, তিন মাসের মধ্যে তা ব্যবহার করে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়, অন্যথায়, ইঙ্কের কোয়ালিটি প্রিন্টিং-এর মানকে প্রভাবিত করবে এবং প্রিন্টহেড ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। সম্পূর্ণ সিল করা ইঙ্কের শেল্ফ লাইফ 6 মাস, 6 মাসের বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করা থাকলে, এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
DTF ট্র্যান্সফার ফিল্মঃ
বর্তমানে, বাজারে বিভিন্ন ধরণের ফিল্ম পাওয়া যায়। সাধারণভাবে বলতে গেলে, অস্বচ্ছ ফিল্মগুলোই ভাল প্রিন্টিং আউটপুট দেয়, কারণ এতে অনেক বেশি ইঙ্ক শোষণকারী কোটিং থাকে। কিন্তু কিছু ফিল্মে লুজ পাউডার কোটিং থাকে যার ফলে অমসৃণ প্রিন্ট হয় এবং অনেকসময় ভালভাবে ইঙ্ক ধরে রাখতে পারেনা। এই ধরনের ফিল্ম দিয়ে কাজ করা বেশ কঠিন, যেখানে ফিল্মটিকে ক্রমাগত পাউডার শেকিং-এর ভেতর দিয়ে যেতে হয় এবং এটি ধরার সময় ফিল্ম জুড়ে আঙ্গুলের ছাপ লেগে যেতে পারে।
কিছু ফিল্ম শুরুতে খুব ভালো আউটপুট দেয় কিন্তু কিছুদিন পরেই কিউরিং-এর সময় এটিতে ভাঁজ এবং বুদবুদ দেখা যায়। বিশেষ করে এক ধরনের DTF ফিল্ম আছে যার গলনাঙ্ক, DTF পাউডারের চেয়েও কম বলে মনে হয়। এক্ষেত্রে পাউডারের আগেই ফিল্মটি গলে যায় এবং তাও আবার 150°C-এ। এই ধরণের ফিল্ম সম্ভবত নিম্ন গলনাঙ্কের পাউডারের জন্য ডিজাইন করা হয়? তবে অবশ্যই তা উচ্চ তাপমাত্রায় ওয়াশিং ফাস্টনেসকে প্রভাবিত করবে। এই অন্য ধরণের ফিল্মটি মাঝে মাঝে এতটাই ভাঁজ হয় যে, এটি 10 সেমি উপরে উঠে ওভেনের উপরের অংশে আটকে যায়, আগুন লেগে যায় এবং হিটিং এলিমেন্টসগুলো নষ্ট করে দেয়।
আমাদের ট্রান্সফার ফিল্ম উচ্চ-মানের পলিইথিলিন উপাদান দিয়ে তৈরি, একটি পুরু টেক্সচার এবং বিশেষ ফ্রস্টেড পাউডার কোটিংসহ, যা ইঙ্ককে আটকে রেখে এটিকে ঠিক করতে পারে। এর পুরুত্ব প্রিন্টিং-এর মসৃণতা এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে সাথে ট্র্যান্সফার ইফেক্টও।
কিউরিং ও মেল্টিং পাউডারঃ
প্রিন্ট করা ফিল্মগুলিতে মেল্টিং পাউডারের আবরণের পর, পরবর্তী পদক্ষেপ হল, একটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা কিউরিং ওভেনে কিউর করা। ওভেনের তাপমাত্রা কমপক্ষে ১১০ ডিগ্রি হওয়া দরকার, যদি তাপমাত্রা ১১০ ডিগ্রির নিচে হয়, তাহলে পাউডারটি সম্পূর্ণরূপে গলতে পারবেনা, যার ফলে প্যাটার্নটি দৃঢ়ভাবে ফ্যাব্রিকের সাথে লেগে থাকবেনা এবং দীর্ঘ সময়ের পরে এটিতে ক্র্যাক দেখা যেতে পারে। একবার ওভেন সেট তাপমাত্রায় পৌঁছে গেলে, এটির কমপক্ষে ৩ মিনিটের জন্য বাতাসও গরম রাখতে হবে। সুতরাং কিউরিং ওভেন DTF-এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্যাটার্নের পেস্ট ইফেক্টকে প্রভাবিত করবে, একটি নিম্নমানের ওভেন, DTF হিট-ট্র্যান্সফারের জন্য অনেকটা দুঃস্বপ্নের মত।
মেল্টিং পাউডারও হিট-ট্র্যান্সফারের প্যাটার্নের গুণমানকে প্রভাবিত করে। যদি নিম্ন মানের পাউডার ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটিতে আঠালো ভাব কম থাকে, । হিট-ট্র্যান্সফার সম্পন্ন হওয়ার পর, প্যাটার্নটি সহজেই ফুলে উঠতে পারে ক্র্যাক তৈরি হতে পারে এবং স্থায়িত্বও কম হবে। যদি সম্ভব হয়, গুণমান নিশ্চিত করতে আমাদের হাই-গ্রেড মেল্টিং পাউডার ব্যবহার করুন।
হিট-প্রেস মেশিন এবং টি-শার্ট কোয়ালিটিঃ
আমাদের আগের পোস্টগুলোতে ব্যাখাকৃত কারণগুলো ছাড়াও, হিট-প্রেসের অপারেশন এবং সেটিংসও DTF-এর ডিজাইন ট্র্যান্সফারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, ফিল্ম থেকে ডিজাইনটি সম্পূর্ণভাবে টি-শার্টে ট্র্যান্সফার করার জন্য হিট-প্রেস মেশিনের তাপমাত্রা ১৬০°-তে পৌঁছাতে হবে। যদি এই তাপমাত্রায় পৌঁছানো না যায় অথবা হিট-প্রেসে সেট করা টাইম যথেষ্ট না হয়, তাহলে প্যাটার্নটি অসম্পূর্ণভাবে ছাড়িয়ে যেতে পারে বা সফলভাবে ট্র্যান্সফার নাও হতে পারে।
টি-শার্টের গুণমান এবং হিট-প্রেসের সময় টি-শার্ট কতটা সমানভাবে বসানো হয়েছে, এই বিষয়গুলোও ডিজাইন ট্র্যান্সফারের মানকে প্রভাবিত করে। DTG প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে, টি-শার্টে সুতির পরিমাণ যত বেশি হবে, প্রিন্টিং ইফেক্ট তত ভাল হবে। যদিও DTF প্রক্রিয়ায় এই ধরনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই,। হিট- ট্র্যান্সফারের আগে, টি-শার্ট সমান ও মসৃণ হওয়া জরুরি, তাই আমরা রেকমেন্ড করব, হিট-ট্র্যান্সফার শুরু করার আগে টি-শার্টটি একটি হিট প্রেসে ইস্ত্রি করা, এটি টি-শার্টের পৃষ্ঠকে সম্পূর্ণ সমতল রাখবে এবং ভিতরের আর্দ্রতা দূর করবে, যা বেস্ট হিট-ট্র্যান্সফারের কোয়ালিটি নিশ্চিত করবে।